Powered By Blogger

Tuesday, December 6, 2016

ওয়াকফ কেন এবং কিভাবে করা যায়

সরকার ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালে ওয়াকফ অধ্যাদেশ -১৯৬২ জারী কারে। ওয়াকফ বলতে অধ্যাদেশের ২ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন মুসলমান কর্তৃক ধর্মীয়, পবিত্র বা দাতব্য কাজের উদ্দেশ্যে তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি স্থায়ীভাবে উৎসর্গ করাকে বুঝায়। তবে কোন অমুসলিমও একই সম্পত্তি একই উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে পারেন। ওয়াকিফ: যিনি সম্পত্তি উৎসর্গ করে তাকে ওয়াকিফ বলে। ওয়াকফ দুই প্রকার: ১) ওয়াকফ লিল্লাহ ও ২) ওয়াক্ফ আল-আওলাদ ওয়াকফ লিল্লাহ: ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে অর্থাৎ পরকালে শান্তির আশায় হইকালে জনগনের কল্যাণে যে ওয়াক্ফ করা হয় তাকে ওয়াকিফ লিল্লাহ বলে। ওয়াকফ আল-আওলাদ: কোন ব্যক্তি ’তার সম্পত্তি ওয়াক্ফ কওে এর আয় হতে আংশিক বা সম্পূর্ণরুপে তার বংশধরদের/ পরিবারের সদস্যদেও এমনকি তার নিজের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করতে পারেন। এরুপ ওয়াক্ফই হর ওয়াকফ আল-আওলাদ। যে সব উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা যায়: মক্কা শরীফের হাজীদের জন্য বোরাত বা বোডিং হাইজ নির্মাণ, ঈদগাহ নির্মাণ, মাদ্রাসা, খানকা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর ব্যয় নির্বাহ, হজ্জ পালনে সাহায্য করা, গরীবদের সাহায্য করা। ওয়াকিফ ও তার বংশধর ভরন পোষণ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসর্গ করা যায়। ওয়াকফের উপাদান সমূহ নিম্নরুপ: ১. ওয়াক্ফের উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসর্গ করতে হবে। ২. ওয়াক্ফ ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে হতে হবে। ৩. ওয়াক্ফের উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসগ অবশ্যই চিরতওে হতে হবে। ৪. ওয়াক্ফিকে উৎসর্গকৃত সম্পত্তি বৈধ মালিক হতে হবে। ৫. ওয়াক্ফিকে প্রাপ্তবয়ষ্ক ও সুস্থ মতিষ্ক হতে হবে। ৬. ওয়াক্ফ অবশ্যই শর্তমুক্ত হতে হবে। ওয়াক্ফের বিষয়বস্তু: স্থাবর বা অস্থাবর উভয় ধরনের সম্পত্তিই ওয়াকফ করা যায়। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে যেমন- কোম্পানির শেয়ার, সরকারী ঋনপত্র, নগদ অর্থ ইত্যাদি। ওয়াক্ফ প্রশাসক: সরকার ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রন ও ব্যবস্থাপনার জন্য ওয়াক্ফ অধ্যাদেশ এর ৭ ধারা অনুসারে ওয়াক্ফ প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। যিনি ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন কওে থাকেন। ওয়াক্ফ প্রশাসক এর দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ১। ওয়াক্ফ প্রশাসক ওয়াক্ফ ও এর তহবিল পরিচালনার জন্য ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন কানে। তিনি এই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পারন করেন। (ধারা- ১৯, ২০) ২। প্রশাসক সরকারের অনুমতিক্রমে এবং ওয়াক্ফ এর কল্যাণে/ উন্নতিকল্পে ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি হস্থান্তর করতে পারে।(ধারা-৩৩) ৩। প্রশাসক উপযুক্ত কারন সাপেক্ষে মোতায়াল্লীকে অপসারন করতে পারেন।(ধারা-৩২) ৪। প্রশাসক তার প্রতিনিধির মাধ্যমে বা জেলা প্রশাসক এর মাধ্যমে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। (বাস্তব্যে জেলা প্রশাসকই ওয়াক্ফ প্রশাসকের পক্ষে দায়িত্ব পালন করেন।(ধারা- ৩৪, ৩৬) ৫। ওয়াক্ফ প্রশাসকের কোন আদেশে কেউ সংক্ষুদ্ধ হইলে তিনি জেলা জজের আদালতে আপিল করতে পারেন। (ধারা- ৩৫) মোতায়াল্লী নিয়োগ: ওয়াক্ফ পরিচালার জন্য গঠিত কমিটির সদস্য সচিবের বা ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় যিনি থাকেন তাকেই বলে মোতায়াল্লি। মোতায়াল্লি সাবালক ও মানসিকভাকে সুস্থ হবেন। মোতায়াল্লী নিয়োগ প্রক্রিয়া নিম্নরুপ: ওয়াকিফ নিজে মোতাল্লী হতে পারেন। ওয়াকিফ সম্পত্তির সুবিধাভোগী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক মোননীত হতে পারেন। ওয়াকিফের মৃত্যুকালীন ঘোষণা দ্বারাও কোন ব্যক্তি মোতায়াল্লী হতে পারেন। আধ্যাত্মিক কার্যক্রম না থাকলে মাহিলাও মোতায়াল্লী নিযুক্তি হতে পারবেন। প্রশাসক মোতায়াল্লী নিয়োগ করতে পারেন। মোতায়াল্লীর দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ওয়াক্ফ সম্পত্তি প্রশাসকের দপ্তরে (ঢাকার ইস্কাটনে) তালিকাভূক্ত করা। প্রতিবছর ১৫ জুলাই এর মধ্যে পূর্ববর্তী অর্থ বছরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব প্রশাসকের নিকট পেশ করা।v আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা।v ওয়াক্ফ সম্পত্তি হস্থান্তার এর প্রয়োজন হলে প্রশাসকের পূর্বানুমতি নেওয়া। ওয়াক্ফ সম্পত্তির আয়ের ৫% বার্ষিক চাঁদা প্রশাসকের দপ্তওে জমা দেওয়া। ওয়াক্ফনামায় উল্লেখিত সমস্যাবলী যথাযথভাবে পালন করা। ওয়াক্ফ সম্পত্তি রেজিষ্ট্রেশনঃ সম্পত্তি হস্তান্তর আইন – ১৮৮২ এর বিধান মতে ওয়াক্ফকৃত স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১০০ টাকার বেশী হলে তা রেজিষ্টী করা বাধ্যতামূলক। তবে অস্থাবর সম্পত্তি মৌখিকভাবেও ওয়াক্ফ করা যায়। ওয়াক্ফ প্রত্যাহার : উইলের মাধ্যমে ওয়াক্ফ সৃষ্টি হয়ে থাকলে ওয়াকিফ তার মৃত্যুর পূর্বে যে কোন সময় তা প্রত্যাহর করতে পারেন। তবে ইউল ব্যতিত অন্য কোন ক্ষেত্রে ওয়াক্ফি ওয়াক্ফ সম্পত্তি প্রত্যাহার করতে পারেন না। ওয়াক্ফ করা বাধ্যতামূলক: মোহামেডনস ল অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে ঈদগাহ, কবরস্থান, ইমামবাড়ী, মাদ্রাসা ও মসজিদের জন্য জমি দান করলে তা অবশ্যই ওয়াক্ফ করতে হবে। অন্যদিকে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন মন্দিরের দেবতার উদ্দেশ্যে পূর্ণ অর্জনের লক্ষে যে সম্পত্তি উঃসর্গ করে তাকে দেবোত্তর সম্পত্তি। দেবোত্তর সম্পত্তি যিনি পরিচালনা করে তাকে সেবাইত বলে। সেবাইত দেবত্তর সম্পত্তি হস্থান্তর করতে পারে না। ধর্মমন্ত্রালয়ের অধীনে একটি দেবোত্তর সম্পত্তি সেল আছে। উক্ত সেল থেকে এরুপ সম্পত্তির সার্বিক তত্ত্বাবধান করা হয়। ওয়াক্ফ সম্পত্তি হস্থান্তরঃ ধর্মীয় প্রতিষ্টান এর সুবিধার জন্য দূরবর্তী স্থানের জমি বিক্রয় নিকটবর্তীস্থানে জমি ক্রয়ের জন্য ওয়াক্ফ প্রশাসক এর পূর্বানুমতি নিয়া ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রয় করা যায়। ওয়াক্ফ সম্পত্তি তালিকাভূক্তির নিয়মঃ যে কেউ ওয়াক্ফ সম্পত্তি তালিকাভূক্তির জন্য ওয়াক্ফ অধ্যাদেশ এর ৪৭ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিষ্ঠান যেমন মাজার লাভজনক হওয়ার কারণে তার লাভজনক এড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে যে কেউ তালিকাভূক্তির জন্য আবেদন করতে পারে।

ওয়াকফ আইন এর বিষয়বস্তু

ইসলামি আইন অনুযায়ী ওয়াকফের অর্থ কোনো মুসলমান কর্তৃক চিরস্থায়ীভাবে কোন সম্পত্তি ধর্র্মীয়, দাতব্য বা পূর্ণের কাজে উৎসর্গ করা। লিখিত ও রেজিস্ট্রকৃত দলিল, মৌখিক দলিল ও দীর্ঘকাল ব্যবহারের ভিত্তিতে কোন সম্পত্তি ওয়াকফে পরিণত হয়। ওয়াকফ দুই প্রকার; জনসাধারণের ওয়াকফ এবং ব্যক্তিগত ওয়াকফ। ওয়াকফ করার সাথে সাথে আল্লাহর উপর মালিকানা বর্তায়। মোতাওয়াল্লি পরিচালনার অধিকার প্রাপ্ত হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরব দেশে কোন ওয়াকফ ছিল না। ওয়াকফ হাদিসের মাধ্যমে জন্মলাভ করে। সম্পত্তি ওয়াকফের মাধ্যমে ধর্মীয়, দানশীল এবং জনকল্যাণমূলক কাজ করা যায়। কোনো মুসলমান যদি ধর্মীয়, দাতব্য বা পবিত্র উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি চিরস্থায়ীভাবে উৎসর্গ করে নিজের স্বত্ত্ব বিলোপ করে এবং উক্ত স্বত্ত্ব আল্লাহর সমীপে সমর্পণ করে তবে ইসলামী আইন অনুযায়ী ওয়াকফ হিসাবে গণ্য হবে। যিনি ওয়াকফ করেন তাকে ওয়াকিফ বলে। ওয়াকফ লিখিত দলিল বা মৌখিকেভাবে করা যায়। তবে ওয়াকফের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হতে হবে। কোম্পানির শেয়ার, প্রমিসরি নোট কিংবা নগদ অর্থ ওয়াকফ করা যায়। সাবালক ও সুস্থতা সম্পন্ন ব্যক্তি ওয়াকফ করতে পারে। ১৯২৩ সালে ওয়াকফ বৈধকরণের জন্য ওয়াকফ ভ্যালিডিটি আইন জারি করা হয়। ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ওয়াকফ আইন জারি করে ওয়াকফ সম্পত্তির তদারকি ও ব্যবস্থাপনা করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। বর্তমানে এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালিত হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়াকফ প্রশাসকের একটি অফিস আছে। পরিচালনা কমিটি গঠন ও ওয়াকফ তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা আছে। ওয়াকফ দুই প্রকার। ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ পরকালে শান্তির আশায় পূর্ণ অর্জনের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সম্পূর্ণ স্বত্ত্ব দান করা আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলে তাকে ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ বলে। ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ এর সম্পত্তির আয়ের অর্ধাংশের বেশি সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়। ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত সম্পত্তি। ওয়াকফ-আল-আওলাদ কোন সম্পত্তির মালিক তার সম্পত্তি নির্দিষ্ট অংশ ধর্মীয়, সৎকাজ বা জনহিতকর কাজের জন্য ব্যয় করার উদ্দেশ্যে দলিলের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি দান করলে তাকে ওয়াকফ-আল-আওলাদ বলে। ওয়াকফ-আল-আওলাদে সম্পত্তিরে আয়ের অর্ধাংশের কম ধর্মীয় কাজে ব্যয় হয়। বাকি অংশ উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে ব্যয় হয়। মোতাওয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপক। মোতাওয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয় তাকে মোতাওয়াল্লী বলে। মোতাওয়াল্লী ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। কোন সুস্থ সবল ব্যক্তিকে মোতাওয়াল্লী নিয়োগ করা যায়। ওয়াকিফ ইচ্ছা করলে তার সন্তান সন্ততি, উত্তারাধিকারী বা অন্য কাউকে মোতাওয়াল্লী নিয়োগ দিতে পারে। মোতাওয়াল্লী তিন বছরের উর্ধ্বকাল কৃষি জমি ইজারা দিতে পারে না। ওয়াকফ প্রশাসকের পূর্বানুমতি ছাড়া ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে না। ১৯৮৬ সালের হিসাব অনুযায়ী মোট বাংলাদেশে ১৫০৫৯৩ টি ওয়াকফ ষ্টেট আছে। তার মধ্যে ৯৭০৪৬টি রেজিষ্ট্রিকৃত, ৪৫৬০৭ টি মৌখিক ৭৯৪০টি ব্যবহারিক। বাংলাদেশে মোট ২১৪৫৭৫.৪৬ একর ওয়াকফ সম্পত্তি আছে তার মধ্যে ২০০৮৪১.০৭ একর কৃষি জমি ও ১৩৭৩৪.৩৯ একর অকৃষি জমি। সম্প্রতিক জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশে ১৪০০ ওয়াকফ সম্পত্তি ওয়াকফ প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের আয় হতে মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান, এতিমখানা, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং ধর্মীয় উৎসব পরিচালিত হয়ে আসছে। ওয়াকফ প্রশাসন বর্তমানে ১৫০০ মসজিদ, ৭০০ মাদ্রাসা, ১০০ এতিমখানা, ৫টি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং নওমসুলিমদের জন্য কল্যাণ তহবিল পরিচালনা করছে।

Wednesday, November 23, 2016

সাংবিধানিক আইনের প্রাথমিক ধারনা ও বিস্তারিত আলোচনা।

সাংবিধানিক আইনের পরিপূর্ণ ধারনার জন্য জন্য একটি দেশের সাধারন আইন সম্পর্কে ধারনা থাকা আবশ্যক । একটি দেশের আইনকে মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ক। সরকার সম্পর্কিত আইন (Public Law) এবং খ। ব্যাক্তি সম্পর্কিত আইন ( Private Law)। ক। সরকার সম্পর্কিত আইন যে আইনে রাষ্ট্রের প্রকৃতি , সরকারের গঠন,কারযাবলি,ক্ষমতা,সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন,সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব, ও কার্যাবলী এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে তাকে সরকার সম্পর্কিত আইন বলে। সরকার সম্পর্কিত আইনের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ নিম্নরূপ আলোচনা করা হল। ১। সাংবিধানিক আইন (Constitutional Law) এবং ২।প্রশাসনিক আইন (Administrative Law ১। সাংবিধানিক আইনঃ সাংবিধানিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বোঝায় যা রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকারের ধরন, কার্যাবলী , ক্ষমতা, সরকারের প্রধান প্রধান বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। ২। প্রশাস নিক আইন ঃপ্রশাসনিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বোঝায় যা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের শুধু প্রশাসনিক দিক নিয়ন্ত্রন করে অর্থাৎ অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়- দায়িত্ব , তাদের মাঝে ক্ষমতার বণ্টন, ব্যক্তি এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাঝে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। সাংবিধানিক আইন ও প্রশাসনিক আইনের মাঝে পার্থক্য বুঝতে হবে । সাংবিধানিক আইন প্রধানত সরকারের প্রধান প্রধান বিভাগের গঠন ও ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু প্রশাসনিক আইন সরকারের বিভিন্ন বিভাগের বাদ বাকী যাবতীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রন করে। উদাহরন স্বরূপ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ধরন কীরূপ হবে, গঠন কীরূপ হবে,সামগ্রিকভাবে তারা কে কি দায়িত্ব পালন করবে তা সাংবিধানিক আইনে বলা থাকে। কিন্তু এ সকল বিভাগের আভ্যন্তরীণ অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়- দায়িত্ব , তাদের ক্ষমতা , আচরন, নিয়ন্ত্রন , কে কত বেতন ভোগ করবে , কিভাবে প্রত্যেক বিভাগের কার্যাবলী পরিচালিত হবে এসব বিষয় প্রশাসনিক আইন আলোচনা করে। খ. ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন যে আইনে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক নির্ধারণ করে তথা নাগরিকদের পারস্পারিক অধিকার সংজ্ঞায়িত করে এবং অধিকারগুলো রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন বলে, উদাহরন স্বরূপ, Law of person, Law of property , Law of contract ইত্যাদি ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন। ব্যক্তি সংক্রান্ত আইনকে আবার দু’ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ১। তত্ত্বগত আইন ( Substantive Law) এবং ২। পদ্ধতিগত আইন ( Procedural Law) ক। তত্ত্বগত আইন: যে আইন ব্যক্তির অধিকারকে সৃষ্টি করে বা সংজ্ঞায়িত করে তাকে তত্ত্বগত আইন বলে । যেমন-সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, চুক্তি আইন ইত্যাদি। খ। পদ্ধতিগত আইন ঃ যে আইনে অধিকারকে রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে পদ্ধতিগত আইন বলে। যেমন- ফৌজদারি কার্যবিধি , দেওয়ানী কার্যবিধি ইত্যাদি । উদাহরণস্বরূপ ঃ কোন সম্পত্তিতে আমার অধিইকার আছে কিনা তা তত্ত্বগত আইনের বিষয় কিন্তু কখন কোন আদালতে আমাকে মামলা করতে হবে তা পদ্ধতিগত আইন নির্ধারণ করে। এতক্ষন পর্যন্ত একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন সম্পর্কে যে ধারনা দেয়া হয়েছে তাতে মনে হতে পারে যে, সাংবিধানিক আইন অন্যান্য আইনের সমপর্যায়ের । কিন্তু তা নয় , কারন সাংবিধানিক আইনকে কোন দেশের মৌলিক বা সর্বচ্চো (Fundamental or supreme) আইন বলে গণ্য করা হয়। এই অর্থে ইহা মৌলিক আইন যে, ইহা সকল আইনের উরধে স্থান লাভ করে থাকে। গেটেলের ভাষায়- “ইহা রাষ্ট্রের মধ্যে সার্বভৌম শক্তির অবস্থান ক্ষেত্র নির্ণয় করে এবং আইনের উৎসের নির্দেশ করে”। একটি দেশের কোন আইনই সাংবিধানিক আইনের তুলনায় মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে না । সাংবিধানিক আইন থেকেই অন্যান্য আইন বৈধতা লাভ করে। একটি দেশের তত্ত্বগত, পদ্ধতিগত, প্রশাসনিক ইত্যাদি সকল আইন সাংবিধানিক আইনের নিম্নতর পর্যায়ে অবস্থান করে । এ সকল আইনের কোন বিধানই সাংবিধানিক আইনের বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। এ কারনেই সাংবিধানিক আইন একটি দেশের সর্বচ্চো আইন। ইহাকে অন্যান্য আইনের বৈধতা নির্ণয়ের মাপকাঠি বা কষ্টিপাথর (touch stone) বলা হয়। সাংবিধানিক আইনকে যদি একটি দেশের মৌলিক আইন ধরা হয় তাহলে একটি দেশের আইনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়ঃ ক।সাংবিধানিক আইন বা মৌলিক আইন (Constitutional or fundamental law) এবং খ। সাধারন আইন (ordinary Law) রাষ্ট্রের সকল প্রশাসনিক , পদ্ধতিগত ও তত্ত্বগত আইন সাধারন আইনের পর্যায়ে পরে।এগুলোকে সাধারন আইন বলার কারন হলো যে, এরা সাংবিধানিক আইনের চেয়ে কম মর্যাদা সম্পন্ন এবং সাংবিধানিক আইনের কোন বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না । এ ধরনের আইন পাশ করতে সাধারন সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাংবিধানিক আইন পাশ করা ও পরিবর্তন করার জন্য জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যেমন, দুই –তৃতীয়াংশ বা তিন চতুর্থাংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, সাধারন আইন ও সাংবিধানিক আইনের মাঝে পার্থক্য শুধুমাত্র লিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । সংবিধান যদি লিখিত ও দুস্পরিবর্তনীয় না হয় তাহলে সেখানে সাংবিধানিক আইন বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন মৌলিক আইন হিসেবে থাকে না; সাধারন আইনের সাথে সমমর্যাদা থাকে। ফলে সাংবিধানিক আইন ও সাধারন আইনের মাঝে কোন পার্থক্য করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেনে কোন লিখিত সংবিধান নেই, পার্লামেন্টের আইন প্রনয়ন ক্ষমতার উপর কোন সীমাবদ্ধতা নেই; ফলে পার্লামেন্ট একই পদ্ধতিতে সাংবিধানিক আইন ও সাধারন আইন পাশ করতে পারে।

অনলাইনে মিলবে জমির রেকর্ড, খতিয়ান

ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের প্রক্রিয়া জোরেশোরে শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ভূমি রেকড ও জরিপ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে এ এমওএই সই হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এমওইউ অনুযায়ী ভূমি সংক্রান্ত ই-সেবা তৈরি বিশেষ করে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের খতিয়ান, মৌজা ম্যাপের ইলেকট্রনিক রেকর্ড অনলাইনে সংরক্ষণ করা হবে। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র ও ভূমি অফিস থেকে এই ই-সেবা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি জাতীয় তথ্য বাতায়নেও এ রেকর্ড পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মৌজার এক কোটি ২১ লাখের বেশি খতিয়ান, ৭১ হাজার মৌজা ম্যাপের ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে। আরো ১৮ হাজার মৌজা ম্যাপের ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরির কাজ চলছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। কর্মকর্তারা জানান, এসব মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান অনলাইনে প্রদর্শনের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে সাধারণ মানুষর সময়, ব্যয় ও ভোগান্তি কমবে। পাশাপাশি ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য অনলাইনে দেখা যাবে। অর্থাৎ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সেবা ই-সেবায় রূপান্তিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচীর প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল জলিল সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

Saturday, November 19, 2016

থানায় পুলিশ মামলা না নিলে কী করবেন

ফৌজদারি মামলার একটা বড় অংশের কার্যক্রম শুরু হয় থানায় এজাহার দায়েরের মধ্য দিয়ে। আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর কোনো নাগরিক থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ বিনামূল্যে সে মামলা নিতে বাধ্য। কোনো কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থানায় মামলা নিতে না চাইলে সংক্ষুব্ধ নাগরিক কী করবেন? সে বিষয়টি তুলে ধরে হলো। থানায় মামলা অপরাধ সংঘটনের পর বিচারপ্রার্থীর প্রথম কাজ হলো থানায় মামলা দায়ের করা। এর পর মামলা তদন্তের মাধ্যমে শুরু হয় বিচারকাজ। পুলিশ বিনামূল্যে সে মামলা নিতে বাধ্য। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, প্রভাবশালীদের চাপে থানার পুলিশ মামলা নিতে চায় না। মামলার বাদী তুলনামূলক দুর্বল হলে থানার পুলিশ এ ধরনের আচরণ করে থাকে বলে অভিযোগ শোনা যায়। দৃশ্যপট-১ নিজে একজন নারী ও পুলিশ সদস্য। তিনি গণধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন অপর এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, যিনি তাঁর সাবেক স্বামী। পুলিশ হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণের মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ তা নেয়নি। গত ১১ জুন রাজধানীতে এমনই এক ঘটনা ঘটে। দৃশ্যপট-২ রেহানাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত তারই সহপাঠী অর্ণব। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে রেহানাকে বাজে প্রস্তাব দেয় অর্ণব। প্রতিবাদ করলে অন্য সহপাঠীদের সামনে তার শ্লীলতাহানি করে বসে অর্ণব। এ ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে রেহানা অভিমান করে আত্মহত্যা করে বসে। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে বিষয়টি বর্ণনা করে একটি মামলা করে। মৃত্যুর আগে রেহানা নিজের সুইসাইড নোটে এই পরিণতির জন্য অর্ণবকে দায়ী করে। রেহানার বাবা-মা থানায় গিয়ে এ সুইসাইড নোটটি আমলে নিয়ে অর্ণবকে আসামি করতে চাইলে পুলিশ তা আমলে নিতে গড়িমসি করে। অর্ণবের বাবা স্থানীয়ভাবে প্রতাপশালী হওয়ায়, আগে থেকেই তিনি থানাকে হাতে রেখেছিলেন। অন্যদিকে নিজের আদরের মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না দেখে রেহানার বাবা-মা ভেঙে পড়েন। প্রতিকার কী? এ রকম অবস্থায় আইনের বিধান কী? পুলিশ যদি মামলা নিতে নাই চায়, সে ক্ষেত্রে তাদের বাধ্য করার মতো কোনো সুযোগ আছে কি? হ্যাঁ, চারটি উপায়ে পুলিশের নির্লিপ্ততার বিরুদ্ধে ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার প্রতিকার পেতে পারেন। পর্যায়ক্রমে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা থানায় পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে একজন ভালো আইনজীবীর পরামর্শক্রমে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় মামলা করলে আদালতে সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলাটি রুজুপূর্বক তদন্তের নির্দেশ দেবে এবং আদালতের এ নির্দেশ মানতে বাধ্য। অন্যসব পন্থার মধ্যে এটি সহজতর এবং এতে সময় কম অপচয় হবে, অর্থনীতিক ঝুঁকিও কমবে। হাইকোর্টে মামলা দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হলো থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে প্রতিকার চাওয়া যায়। রিট আবেদনে ভিকটিম বা তার পরিবার থানায় মামলা দায়েরের অনুমতি প্রদান ও আসামিদের গ্রেফতারের আদেশ প্রার্থনা করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ রায় প্রদান করলে পুলিশ রায় মানতে বাধ্য। মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে প্রতিকার চাওয়ার তৃতীয় মাধ্যম হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ ছাড়া বেসরকারি মানবাধিকার কমিশনের কাছেও এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া যায়। বিশেষ করে নারী নির্যাতন ও মানবিক বিষয়গুলো মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন করলে তাঁরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন। মামলার পদ্ধতি নালিশি মামলার ক্ষেত্রে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ প্রথমেই মামলা শুরু করে না। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য আদেশ দেওয়ার পর পরবর্তী সময়ে মামলা পরিচালনা করবেন। তাই নালিশি মামলার ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ দায়ের করে পরবর্তী শুনানির দিন যদি সংশ্লিষ্ট বাদী আদালতে হাজির না হয় কিংবা ঘটনা তদন্তের যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হয়, তবে ম্যাজিস্টেট মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। অভিযোগকারী চাইলে এর বিরুদ্ধে জজ আদালতে বা হাইকোর্টে যেতে পারেন। করণীয় পুলিশ থানায় কখনো মামলা নিতে না চাইলে বিচলিত হয়ে নিজেকে অসহায় ভাবার কোনো কারণ নেই। আইনানুযায়ী যে কেউই এ রকম পরিস্থিতিতে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে নালিশি মামলা করে আইনের আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থীরা থানায় আইনের আশ্রয় না পেলে পুলিশকে এড়িয়ে অজ্ঞতা, দীনতা ও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার দরুন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে তাই এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠেীর জন্য সরকারের আইনি সহায়তা প্রদান কর্মসূচিও ব্যাপক পরিসরে বাড়লে উপকার পাবে সাধারণ মানুষ।

Thursday, November 17, 2016

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন আইনে বৈধ বিবাহের অবশ্য পূরণীয় শর্তগুলো সবাইর জানা দরকার।

বিবাহের যোগ্যতা : বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক/বয়স্কা এবং সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের বয়স নূন্যতম ২১ বছর এবং স্ত্রীলোকের বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতে হবে। প্রস্তাব দান এবং কবুল : বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং অপর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দান ও গ্রহণ একই মজলিসে কমপক্ষে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ সাক্ষী কিংবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষীর সামনে হতে হবে। এটিই বিবাহ বন্ধন সংগঠিত হওয়ার মূল শর্ত। সম্মতি : বিবাহের জন্য পাত্র এবং পাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতির প্রয়োজন। বল প্রয়োগে সম্মতি আদায়ে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন : বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুসারে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার দ্বারা অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করাতে হবে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি : সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে বিবাহের ফি নির্ধারণ করেছে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি দেনমোহরের ওপর নির্ধারণ হয়ে থাকে। দেনমোহরের প্রতি হাজারে ১০ টাকা হারে ফি নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রাররা সরকার নির্ধারিত রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকেন। দেনমোহর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফি চার হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করার ফলাফল : যেহেতু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করলে নিম্নলিখিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় : ১. সরকার নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার কর্তৃক বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিবাদ-বিসংবাদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ২. বিবাহ রেজিস্ট্রি না হাওয়ায় বিবাহের বৈধতার ক্ষেত্রে দলিলগত সাক্ষীর অভাব ঘটে, ফলে বিবাদ নিষ্পত্তি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ৩. বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার ফলে মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৈধতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ৪. বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন না হলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোষ ও মোহরানার দাবির মামলা অগ্রাহ্য বলে গণ্য হতে পারে। বিবাহের দেনমোহর : দাম্পত্যজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেনমোহর। দেনমোহর বিবাহের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। বিবাহের রেজিস্ট্র্রেশনের সময় দেনমোহর ধার্য করতে হবে। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে। বিবাহের সময় প্রতিদানস্বরূপ বর কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দিতে সম্মত অথবা গৃহীত কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে মোহর বলে। মোহরপ্রাপ্তির অধিকার সম্পূর্ণরূপে স্ত্রীর। মোহরানা বলতে এমন অর্থ সম্পদ বুঝায়, যা বিয়ের বন্ধনে স্ত্রীর ওপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়। মোহরানা স্বামীর কোনো করুণা নয়, না কোনো সামাজিক ট্রাডিশন। স্ত্রীর মোহরানা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার যে নির্দেশ তা নামাজ রোজার মতোই একটি নির্দেশ। স্ত্রীর মোহরানার অর্থ আদায় করা স্বামীর ওপর যেমন অবশ্য কর্তব্য, তেমনি তা ইবাদতও। ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক মোহর আদায় প্রতিটি স্বামীর জন্য ফরজ। দেনমোহর স্বামীর জন্য একটি ঋণ, সর্বাবস্থায় দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। রাসুল (সা.) বলেছেন – ’যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে মোহরানা দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করতে তার ইচ্ছে নেই, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হব

৫৪ ধারায় নিঃশেষ এক জীবন

১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই। এই দিনটি অভিশাপ হয়ে এসেছিল যুবক ফজলু মিয়ার জীবনে। পুলিশের সন্দেহের কারণে তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেল ২২টি বছর। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর মুক্তি মিলছে বটে, কিন্তু আর কি ফিরে পাবেন তিনি স্বপ্নময় সেই জীবন? ২২ বছর আগে সিলেটের আদালতপাড়ায় ঘোরাঘুরি করার সময় পুলিশের একজন ট্রাফিক সার্জেন্টের সন্দেহের শিকার হন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলি ইউনিয়নের ধরাধরপুর গ্রামের ফজলু মিয়া। এরপর তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ফজলুর বিরুদ্ধে পাগল আইনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। গতকাল বুধবার ফজলু মিয়াকে ভুক্তভোগী হিসেবে আদালতে উপস্থাপনের পর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ফজলুকে আইনি সহায়তা দেওয়া বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্টের আইনজীবী জ্যোৎস্না ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'আদালতে ফজলু মিয়াকে আসামি নয় বরং একজন ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করেছি। আদালত বিষয়টি অনুধাবন করে জামিন মঞ্জুর করেছেন।' ফজলু মিয়াকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর একসময়ের সহপাঠী দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য কামাল উদ্দিন রাসেল। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তাঁকে (ফজলু) অনেক বছর খুঁজে ফিরেছি। কিন্তু পাইনি। তিন বছর আগে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। এরপর খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে দেই। কিন্তু কয়েক দিন আগে জানতে পারি, তিনি কারাবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এরপর খোঁজখবর নিয়ে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করি।' জানা গেছে, ফজলু মিয়া যখন গ্রেপ্তার হন তখন তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ২৭-২৮ বছর। এখন তাঁর বয়স ৫০ পেরিয়েছে। শরীর ভেঙে গেছে। ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না। কথাও জড়িয়ে যায় মুখে। অতীতের কিছুই যেন তাঁর মনে নেই। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন দেখাচ্ছিল তাঁকে। ধরাধরপুর গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফজলু ওই গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলার ছেলে। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর মা-বাবা দুজনই মারা যান। পরিবারের আর কেউ নেই। তিনি বিয়ে করেননি, সংসার হয়নি তাঁর। এই ২২ বছর তাঁকে কেউ কারাগারে দেখতে আসেনি। কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন গুনে গুনে ১৯৭ দিন। সেই আদালতপাড়ায়ও দেখা হয়নি তাঁর কোনো স্বজনের সঙ্গে। আদালতে নথিপত্র ঘেঁটে যতটুকু জানা গেছে তা হলো ১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সিলেটের আদালতপাড়া থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে ফজলু মিয়াকে আটক করেন তৎকালীন ট্রাফিক সার্জেন্ট জাকির হোসেন। সন্দেহের বশে ৫৪ ধারায় ফজলুকে ধরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তারপর ফজলুর বিরুদ্ধে পাগল আইনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। পরে ২০০২ সালে ফজলুকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। আদালত থেকে আদেশ পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দেন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন এই ব্যক্তিকে নিতে কেউ আসেননি। ফলে তাঁকে আবারও নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। এরপর কেটে গেছে আরো ১৩ বছর। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া বলেন, 'আদালতের নির্দেশ যাই থাক না কেন, আমরা তো গেটের বাইরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারি না। সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ তাদের সেই দায়িত্বটা পালন করতে পারেনি।' একসময় ফজলুর এই বিভীষিকাময় জীবনের কথা গণমাধ্যমে উঠে আসে। ফলাও করে প্রচার হয় ফজলু মিয়ার করুণ কাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। কিন্তু তার পরও আইনের মারপ্যাঁচে কেটে যায় আরো ১০ বছর। অবশেষে গতকাল আদালতে হাজির হন ফজলু মিয়া। এটি ছিল তাঁর ১৯৮তম হাজিরা। সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম জহুরুল হক চৌধুরী তাঁর জামিন আবেদন শোনেন। ফজলু মিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জ্যোৎস্না ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সৈয়দ শামিম আহমদ। পরে আদালত কামাল উদ্দিন রাসেলের জিম্মায় ফজলুকে জামিন দেন। কামাল উদ্দিন রাসেল বলেন, ফজলুকে চিকিৎসা করানো দরকার। আজ মুক্তি পেলে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর অন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা ঠিক করা হবে। কামাল আরো জানান, এর মধ্যে ঢাকার দুটি প্রবীণ নিবাস ফজলুর দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাঁরা ভেবে দেখছেন কী করা যায়।