Tuesday, December 6, 2016
ওয়াকফ আইন এর বিষয়বস্তু
ইসলামি আইন অনুযায়ী ওয়াকফের অর্থ কোনো মুসলমান কর্তৃক চিরস্থায়ীভাবে কোন সম্পত্তি ধর্র্মীয়, দাতব্য বা পূর্ণের কাজে উৎসর্গ করা। লিখিত ও রেজিস্ট্রকৃত দলিল, মৌখিক দলিল ও দীর্ঘকাল ব্যবহারের ভিত্তিতে কোন সম্পত্তি ওয়াকফে পরিণত হয়।
ওয়াকফ দুই প্রকার; জনসাধারণের ওয়াকফ এবং ব্যক্তিগত ওয়াকফ। ওয়াকফ করার সাথে সাথে আল্লাহর উপর মালিকানা বর্তায়। মোতাওয়াল্লি পরিচালনার অধিকার প্রাপ্ত হয়। ইসলামের প্রাথমিক
যুগে আরব দেশে কোন ওয়াকফ ছিল না। ওয়াকফ হাদিসের মাধ্যমে জন্মলাভ করে।
সম্পত্তি ওয়াকফের মাধ্যমে ধর্মীয়, দানশীল এবং জনকল্যাণমূলক কাজ করা যায়।
কোনো মুসলমান যদি ধর্মীয়, দাতব্য বা পবিত্র উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি চিরস্থায়ীভাবে উৎসর্গ করে নিজের স্বত্ত্ব বিলোপ করে এবং উক্ত স্বত্ত্ব আল্লাহর সমীপে সমর্পণ করে তবে ইসলামী আইন অনুযায়ী ওয়াকফ হিসাবে গণ্য হবে।
যিনি ওয়াকফ করেন তাকে ওয়াকিফ বলে। ওয়াকফ লিখিত দলিল বা মৌখিকেভাবে করা যায়। তবে ওয়াকফের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হতে হবে।
কোম্পানির শেয়ার, প্রমিসরি নোট কিংবা নগদ অর্থ ওয়াকফ করা যায়। সাবালক ও সুস্থতা সম্পন্ন ব্যক্তি ওয়াকফ করতে পারে।
১৯২৩ সালে ওয়াকফ বৈধকরণের জন্য ওয়াকফ ভ্যালিডিটি আইন জারি করা হয়। ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ওয়াকফ আইন জারি করে ওয়াকফ সম্পত্তির তদারকি ও ব্যবস্থাপনা করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। বর্তমানে এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালিত হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়াকফ প্রশাসকের একটি অফিস আছে।
পরিচালনা কমিটি গঠন ও ওয়াকফ তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা আছে। ওয়াকফ দুই প্রকার।
ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ
পরকালে শান্তির আশায় পূর্ণ অর্জনের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সম্পূর্ণ স্বত্ত্ব দান করা আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলে তাকে ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ বলে। ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ এর সম্পত্তির আয়ের অর্ধাংশের বেশি সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়। ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত সম্পত্তি।
ওয়াকফ-আল-আওলাদ
কোন সম্পত্তির মালিক তার সম্পত্তি নির্দিষ্ট অংশ ধর্মীয়, সৎকাজ বা জনহিতকর কাজের জন্য ব্যয় করার উদ্দেশ্যে দলিলের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি দান করলে তাকে ওয়াকফ-আল-আওলাদ বলে। ওয়াকফ-আল-আওলাদে সম্পত্তিরে আয়ের অর্ধাংশের কম ধর্মীয় কাজে ব্যয় হয়। বাকি অংশ উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে ব্যয় হয়। মোতাওয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপক।
মোতাওয়াল্লী
ওয়াকফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয় তাকে মোতাওয়াল্লী বলে। মোতাওয়াল্লী ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। কোন সুস্থ সবল ব্যক্তিকে মোতাওয়াল্লী নিয়োগ করা যায়। ওয়াকিফ ইচ্ছা করলে তার সন্তান সন্ততি, উত্তারাধিকারী বা অন্য কাউকে মোতাওয়াল্লী নিয়োগ দিতে পারে। মোতাওয়াল্লী তিন বছরের উর্ধ্বকাল কৃষি জমি ইজারা দিতে পারে না। ওয়াকফ প্রশাসকের পূর্বানুমতি ছাড়া ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে না। ১৯৮৬ সালের হিসাব অনুযায়ী মোট বাংলাদেশে ১৫০৫৯৩ টি ওয়াকফ ষ্টেট আছে। তার মধ্যে ৯৭০৪৬টি রেজিষ্ট্রিকৃত, ৪৫৬০৭ টি মৌখিক ৭৯৪০টি ব্যবহারিক।
বাংলাদেশে মোট ২১৪৫৭৫.৪৬ একর ওয়াকফ সম্পত্তি আছে তার মধ্যে ২০০৮৪১.০৭ একর কৃষি জমি ও ১৩৭৩৪.৩৯ একর অকৃষি জমি।
সম্প্রতিক জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশে ১৪০০ ওয়াকফ সম্পত্তি ওয়াকফ প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের আয় হতে মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান, এতিমখানা, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং ধর্মীয় উৎসব পরিচালিত হয়ে আসছে।
ওয়াকফ প্রশাসন বর্তমানে ১৫০০ মসজিদ, ৭০০ মাদ্রাসা, ১০০ এতিমখানা, ৫টি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং নওমসুলিমদের জন্য কল্যাণ তহবিল পরিচালনা করছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)

No comments:
Post a Comment